প্রকাশিত: Thu, Jul 6, 2023 10:31 PM
আপডেট: Mon, May 12, 2025 10:13 PM

[১]বিশ্ববাজারে ১১ বছরে চালের দাম সর্বোচ্চ, আরও বাড়ার আশঙ্কা

মনজুর এ আজিজ: [২] উৎপাদন হ্রাস ও আবহাওয়াগত কারণে বিশ্ববাজারে চালের দাম ১১ বছরের রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ দামে উঠেছে। বাজার বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এল নিনো প্যাটার্নের আবহাওয়ার প্রভাবে ভবিষ্যতে চালের দাম অন্তত আরও ৫ গুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

[৩] বিশ্বের বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ ভারতের চাল রপ্তানিকারকদের সংস্থা রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বি.ভি. কৃষ্ণা রাও রয়টার্সকে বলেন, ভারত বরাবরই সবচেয়ে কম দামে চাল রপ্তানি করে। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় চালের উৎপাদন মারাত্নকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চাল উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে কৃষকদের কাছ থেকে সরকারকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে এবং রপ্তানিমূল্য বাড়াতে হচ্ছে। ২০২২ সালে মোট ৫ কোটি ৬০ লাখ টন চাল রপ্তানি করেছিল ভারত।

[৪] বিশ্বের একমাত্র প্রধান খাদ্যশস্য হচ্ছে চাল। যেটি উৎপাদনের জন্য নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এবং মৌসুমী বৃষ্টিপাত অপরিহার্য। এই গ্রহের সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত এবং প্রতি বছর বিশ্বে যে পরিমাণ চালের উৎপাদন হয়, তার ৯০ ভাগই হয় এশিয়ার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলগুলোতে।

[৫] যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম এই মুহূর্তে চাল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে থাকা ৬টি দেশ। কিন্তু এল নিনো আবহাওয়া প্যাটার্ন, অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, খরা প্রভৃতি কারণে গত বছর চালের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। বাজারে বর্তমানে চালের যে দাম, তা ইতোমধ্যে গত ১১ বছরের দামের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।

[৬] ভারতীয় চালের দাম বেড়ে যাওয়াই এই উল্লম্ফনের প্রধান কারণ। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বাজার বিষয়ক সূচক বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি জুলাই মাসে চালের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ। এর আগে গত জুন মাসে এই মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশ।

[৭] ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিভিত্তিক বাজার বিশ্লেষক সংস্থা গ্লোবাল ট্রেডিং হাউসের তথ্য অনুসারে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেশটিতে গত বছর ২৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে গ্রীষ্মকালীন চালের উৎপাদন। এদিকে চালের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে ভারতের কেন্দ্রে আসীন বিজেপি সরকারকে। কারণ, সামনের বছরই দেশটিতে লোকসভা নির্বাচন। 

[৮] নয়াদিল্লির একজন ডিলার রয়টার্সকে বলেন, যদি পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়, সেক্ষেত্রে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারী দেশ থাইল্যান্ডেও গত বছর উৎপাদিত চালের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। একই কারণে চতুর্থ বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারী দেশ ভিয়েতনামেও চালের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে বলে জানা গেছে।

[৯] চাল উৎপাদনে শীর্ষে থাকা অপর দেশ চীন এর মধ্যেই অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। নয়াদিল্লির ওই ডিলার জানিয়েছেন, চলতি বছর মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান এবং ভিয়েতনাম থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন চাল বিশ্ববাজারে আসতে পারে। 

[১০]তবে ভারত ও চীনের যোগান যদি না বাড়ে, সেক্ষেত্রে এই চার দেশ থেকে আসা শস্য আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমাতে খুব কার্যকর হবে না। চীনকে অনুসরণ করে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও আন্তর্জাতিক বাজারে চাল সরবরাহের পরিবর্তে তা মজুতে বেশি মনযোগী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের একজন শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক। সম্পাদনা: শামসুল হক বসুনিয়া